ইসলামে বিনয় ও নম্রতার গুরুত্ব।বিনয় ও নম্রতা চর্চার সুফল
ইসলামে বিনয় ও নম্রতার গুরুত্ব।বিনয় ও নম্রতা চর্চার সুফল
ইসলাম মানুষকে যেসব ভাল গুণ আয়ত্ত করার নির্দেশ বা উৎসাহ প্রদান করেছে, বিনয়ী হওয়া বা নম্রতা অবলম্বন করা তার অন্যতম ।। একজন মুসলিম সবার সঙ্গে সর্বক্ষেত্রে বিনয়ী আচরণ করবে, নম্রতা। হবে তার মুসলিম চরিত্রের অন্যতম দিক এটাই ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) শিক্ষা। বিনয়ী ব্যক্তিকে আল্লাহ যেমন ভালােবাসেন, তেমনি মানুষও তাকে ভালােবাসেন । যে আল্লাহর উদ্দেশে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। বিনয় ও নম্রতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বিনয় ও নমতা সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, যারা তােমার অনুসরণ করে সে সব বিশ্বাসীর প্রতি বিনয়ী হও। (সূরা আশ-শুআরা : ২১৫)। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল এবং তার সঙ্গে যারা আছে, তারা কাফিরদের প্রতি বজ্রকঠোর । আর নিজেরা নিজেদের প্রতি বড়ই করুণাশীল। (সূরা আল ফাতহ: ২৯)।
আল্লাহ তায়ালা সূরা আল মায়েদার ৫৪ নাম্বার আয়াতে ইরশাদ করেছেন, হে ইমানদারগণ! তােমাদের মধ্যে কেউ যদি নিজের দ্বীন থেকে ফিরে যায়, আল্লাহ আরও অনেক লােক তৈরি করবেন; যারা। হবে আল্লাহর প্রিয় এবং আল্লাহ হবেন তাদের প্রিয় । যারা মুমিনদের প্রতি ন্ত্র ও বিনয়ী হবে এবং কাফেরদের প্রতি হবে অত্যন্ত কঠোর । মহান আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেন, তারাই তাে আল্লাহর প্রকৃত বান্দা যারা জমিনে নম্রতার সঙ্গে চলাফেরা করে। আর যখন মূর্খ লােকরা তাদের সঙ্গে আল্লাহর বিষয়ে তর্ক করে তখন তারা বলে দেয় তােমাদের সালাম। (সূরা আল-ফুরকান : ৬৩)। বিনয় ও নমতা সম্পর্কে হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত । আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ স্বয়ং নম্র, তাই তিনি নম্রতাকে ভালােবাসেন। তিনি কঠোরতার জন্য যা দান করেন না তা নম্রতার জন্য দান করেন।
তা ছাড়া অন্য কিছুতেই তা দান করেন না। (মুসলিম)। অন্য হাদিসে আরাে বলা হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দানের সম্পদ কমে না। ক্ষমার দ্বারা আল্লাহ তার বান্দার ইজ্জত ও সম্মান বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কিছুই। করেন না। আর যে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বিনয় নম্রতা নীতি অবলম্বন করে, আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন । (মুসলিম)। মানবতার শ্রেষ্ঠ রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ মহান ওহির মাধ্যমে।
রাসূল করিম (সা.)-এর ৬৩ বছরের সুদীর্ঘ জীবনের। গােটাটাই নম্রতা আর বিনয়ী আচরণে পরিপূর্ণ। কেবল ইসলামপ্রিয় মানুষদের সঙ্গেই নয়, তকালীন কাফিরমুশরিকরাও নবীজির ব্যাপারে বিনয়ী না হওয়া বা নম্ব স্বভাবের অধিকারী না হওয়ার কোনাে অভিযােগ করতে।পারেনি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা কর না।
আমার কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছেন, নম্রতা ও কোমলতা অবলম্বন করাে অর্থাৎ বিনয়ী হও। কেউ যেন অন্যের ওপর গর্ব ও অহঙ্কারের পথ অবলম্বন না করে এবং কেউ যেন কারাে ওপর অত্যাচার না করে ।। (মুসলিম) রাসূল করিম (সা.) এর ৬৩ বছরের সুদীর্ঘ জীবনের গােটাটাই নম্রতা আর বিনয়ী আচরণে পরিপূর্ণ। কেবল ইসলামপ্রিয় মানুষদের সঙ্গেই নয়, তৎকালীন কাফির-মুশরিকরাও নবীজির ব্যাপারে বিনয়ী না হওয়া। বা নম্র স্বভাবের অধিকারী না হওয়ার কোনাে অভিযােগ করতে পারেনি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা কর না। নিশ্চয় তুমি ভূপৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত সমান হতে পারবে না। এসবের মধ্যে যেগুলাে মন্দ কাজ সেগুলাে তােমার পালনকর্তার কাছে। অপছন্দনীয় । (বনি ইসরাইল-৩৮,৩৯)। মহান আল্লাহ বলেন, 'আর যখন আমরা বনী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার
নম্রতার প্রকারভেদ:
নম্রতা এবং বিনয়কে ক্ষেত্রের উপর নির্ভর করে 3 ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নলিখিত বিভাগগুলি উল্লেখ করা হয়েছে। 1. মানুষের সাথে আচরণে নম্রতা: মানুষের সাথে আচরণ করার ক্ষেত্রে নম্রতা সম্পর্কে, আল্লাহতায়ালা তাঁর রাসূলকে বলেছেন: فبما رحمة من الله لنت لهم ولو كنت فظا فاعف عنهم واستغفر لهم وشاورهم في الأمر فإذا عزمت فتوكل على الله إن الله يحب المتوكلين- ‘আল্লাহর রহমতে তুমি তাদের প্রতি সদয় হয়েছ; আপনি যদি অভদ্র এবং কঠোর হন তবে তারা আপনার চারপাশে থাকা থেকে দূরে সরে যাবে। সুতরাং তাদের ক্ষমা করুন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এবং কাজে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। তারপর যখন আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন তখন আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। যারা ভরসা করে আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন' (আলে ইমরান ৩/১৫৯)। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি হযরত কারীম (ছাঃ)-কে বললেন, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, لاَ تَغْضَبْ فَرَدَّدَ مِرَارًا، قَالَ لاَ تَغْضَبْ. 'তুমি রাগ করো না। লোকটি বেশ কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করল। বললেন, ‘তুমি রাগ করো না’। [৬] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوْقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ. ‘মুসলিমদের অপমান করা ফাসেকি এবং হত্যা কুফর’। [৭] 2. বান্দাদের সাথে নম্রতা: ইসলাম আমাদের বান্দাদের সাথে ভাল ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) একবার মাটি থেকে লাঠির টুকরো বা অন্য কোনো বস্তু দিয়ে বললেন, তাকে মুক্ত করার সমান কোনো ফজিলত নেই। কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি: مَنْ لَطَمَ مَمْلُوْكَهُ يَوْ ضَرَبَهُ فَكَفَّارَتُهُ أَنْ يُعْتِقَهُ- 'যে ব্যক্তি তার গোলামকে থাপ্পড় দেয় বা চড় দেয়, সে মুক্ত'। নির্দেশিত আচরণ। ইসলাম চাকর ও গৃহপরিচারিকাদের সাথে ভালো ব্যবহার করারও নির্দেশ দেয়। আবু হুরারাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إذا أتى أحدكم لم يجلسه معه فليناوله لقمة أو لقمتين أو أكلة أو أكلتين, فإنه ولى علاجه. ‘তোমার কোনো বান্দা যখন তার খাবার নিয়ে আসে, সে যদি তার সাথে না বসে, সে যেন তাকে এক লুকমা বা দুই লুকমা খাবার দেয়। কারণ সে তার উত্তাপ ও কষ্ট সহ্য করেছে। "[9] 3. পশুদের সাথে নম্রতা: পশু-পাখির সাথে নম্র আচরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হিশাম ইবনু যায়েদ (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ আমি আনাস (রাঃ)-এর সাথে হাকাম ইবনু আইয়ুবের কাছে গেলাম। তখন আনাস (রাঃ) কিছু ছেলেকে বা বর্ণনাকারীকে বলতে দেখলেন, কিছু যুবক একটি মুরগি বেঁধে তার দিকে তীর নিক্ষেপ করেছে। আনাস (রাঃ) বলেন, نَهَى النَّبِىُ صلى الله عليه وسلم أن تُصْبَرَ الْبَهَائِمُ. ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এভাবে পশু বেঁধে তীর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন’। [১০] অন্য বর্ণনায় আছে, ইবনে ওমর (রাঃ) কিছু কুরাইশ যুবকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা একটি পাখি বেঁধে তাতে একটি তীর ছুড়েছিল। এবং যেহেতু প্রতিটি শট ব্যর্থ হয়েছে, তারা পাখির মালিকের জন্য একটি তীর সেট করেছে। অতঃপর তারা ইবনে উমর (রাঃ)-কে দেখে আলাদা হয়ে গেল। ইবনু উমর (রাঃ) বলেনঃ যে এটা করে সে আল্লাহর অভিশপ্ত, যে এটা করে সে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। 'কে এটা করেছে? যে এটা করে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ। রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে অভিসম্পাত করেছেন, কোন প্রাণীকে লক্ষ্য করে'। [১১] শাদ্দাদ বিন আউস বলেন, আমার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দুটি কথা মনে আছে, তিনি বলেন, إن الله كتب الإحسان على كل شىء وإذا قتلتم فأحسنوا القتلة وليحد أحدكم فأحدكم شفرته فليرح ذبيحته. ‘আল্লাহ তা’আলা তোমাকে প্রতিটি বিষয়ে ‘ইহসান’ দান করেছেন। সুতরাং যখন তোমরা হত্যা কর তখন নম্রতার সাথে হত্যা কর এবং যখন যবেহ কর তখন দয়ার সাথে জবাই কর। তোমরা সবাই ছুরি ধারালো কর এবং তার জবাইকৃত পশুকে আঘাত না কর। '[12]বিনয় ও নমরতার গুরুত্ব:
বিনিয়রতা নির্দেশক : আল্লাহ রাববুল আলামীন ধীর-স্থিরতা ও নমর অবলম্বন পূর্ব সংযত জামিনদের ফরম করার জন্য মুমিনদের নির্দেশ। وَاقْصِدْ فِيْ مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيْرِ- ‘সংযায়তা এবং আপনার সংযম সঙ্গম করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর’ (লোক্বমান ৩১/১৯)।
এরশাদ হচ্ছে,وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ- ‘তুমি তোমার অনুসারী মুমিনদের প্রতি সদয় হও’ (শু‘আরা ২৬/২১৫)।
আয়শা (রাঃ) হ’তে তিনি বলেন, একবার ইহুদীদের একটি দল গ্রুপ (ছাঃ)-এর জন্য অনুরোধের জন্য অনুরোধ, السَّامُ عَلَيْكَ ‘আপনার মৃত্যু ঘটুক’। তখন আমি উত্তরে,عَلَيْكُمُ السَّامُ وَاللَّعْنَةُ ‘বরং আমার মৃত্যু ঘটুক এবং বর্ষিত’। আকাশ (ছাঃ) বললেন, ‘হে আয়শা! থাম। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা সর্ববিষয়ে কোমলতা পসন্দ করেন। উত্তরে আমি বলেছি, আপনি কি তা বলেছেন, শোনেনি? তিনি বললেন, আমি ‘ওয়ালাইকুম’ (তাদের কথা তাদের দিকে বলেছি)।[13]
অপর বর্ণনায়, আয়েশা (রাঃ) বলেন, ইহুদীর নবী করিম (রাঃ)-এর কাছে এসে বললেন, ‘আসামু আলাইকা’ ‘আপনার মৃত্যু’। উত্তরে তিনি বললেন, ওয়ালাইকুম। তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন, আমার মৃত্যু, আল্লাহ তা‘আলা প্রতি অভিশম্পাত বর্ষণ করুন এবং আমাদের উপর রুষ্ট হোন। তখন পুলিশ (ছাঃ) বললেন, আয়েশা! থাম, নমরতা অবলম্বন করো, কঠোরতা ও অশালনতা পরিহার করো’।[14]
তিনি বলেছেন, وَإِنَّ اللهَ أَْحَى إِلَىَّ أَنْ تَواضَعُوْا حَتَّى لاَ يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى يَفْخَرَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ 'আল'-আহদٍ وَلاَ يَبْغِيْنَ 'আল্লাহ'র প্রতি আহ্বান করেছেন। গর্ব না করে'।[15]
বিশ্ব নাগরিকদের প্রশংসা : মহান আল্লাহ বিনয়ী ও নমর স্বভাবের মানুষের প্রশংসায় বলেন,
وعباد الرحمن الذين يمشون على الأرض هونا وإذا خاطبهم الجاهلون قالوا سلاما, والذين يبيتون لربهم سجدا وقياما, والذين يقولون ربنا اصرف عنا عذاب جهنم إن عذابها كان غراما, إنها ساءت مستقرا ومقاما-
'দয়াময় ভয়ানক বান্দা তো তারাই, যারা ভালোভাবে নমরফেরা করে এবং কালে যখন অজ্ঞাত ব্যক্তি সম্বোধন করে তখন তারা বলে 'সালাম'। আর যারা রাত্রি উচ্চারিত করে পালন করার উদ্দেশ্যে সিজদাবন থেকে ও দন্ডায়মান হয় এবং তারা বলে, হে আমার প্রতিপালক! আমাদের থেকে জাহান্নানা শাস্তি মেরে বিদূরিত কর, নিশ্চয়ই এর নিরাপদ বিনাশ। নিশ্চয়ই তা অবস্থান ও আবাসিক হিসাবে অত্যন্ত নিকৃষ্ট’ (ফুরক্বান ২৫/৬৩-৬৬)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন, تلك الدار الآخرة نجعلها للذين لا يريدون علوا في الأرض ولا فسادا والعاقبة للمتقين 'এটা আখিরাতের নিবাস যা আমি নির্ধারণ করি তাদের জন্য যারা পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। মুত্তাক্বীদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম’ (ক্বাছাছ ২৮/৮৩)।
পক্ষান্তরে উদ্ধত অহংকারী দাম্ভিকদের সম্পর্কে আল্লাহ রাববুল আলামীন কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ولا تصعر خدك للناس ولا تمش في الأرض مرحا إن الله لا يحب كل مختال فخور- 'অহংকার বশে তুমি মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে পদচারণা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পসন্দ করেন না’ (লোক্বমান ৩১/১৮)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَلاَ تَمْشِ فِي الأَرْضِ مَرَحاً إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الأَرْضَ وَلَن تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُوْلاً- ‘পৃথিবীতে বিস্মৃত হওয়া’। তুমিই পদে ভূপৃষ্ঠ কখনই বিদীর্ণ করতে না এবং উচ্চ উচ্চারণে তুমি কখনো পর্বত সমে হ’তে লাভ না’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৩৭)।
সামনের (ছাঃ) স্থানীয় বিনয়দের প্রশংসা : নেটওয়ার্ক (ছাঃ) লেখক, الْمُؤْمِنُ غِرٌّ كَرِيْمٌ وَالْفَاجِرُ خِبٌّ لَئِيْمٌ ‘মুমিন ব্যক্তি নমর ও ভদ্র হয়। পার্টির পাপী মানুষ ও চরিত্রহীন হয়।
أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ كُلُّ ضَعِيفٍ مُتَضَعِّفٍ لَوْ أَقْسَمٍ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ النَّبِرُكُمْ بِأَرَّهُ، أَلاَ أُخْبِرُكُمْ، أَلاَ أُخْبِرُكُمْ، عَلَى اللهِ لَأَبَرَّمٍ النَّبِرُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ كُلُّ ضَعِيفٍ مُتَضَعِّفٍ لَوْ أَقْسَمٍ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ النَّبِرُكُمْ بِأَهْلِ مُخْبِرُكُمْ
আমি কি তোমাকে জান্নাতী লোকের সংবাদ দিব না? আর তারা হ’ সরলতার দরূণ, দেখাকে বাইরে, তুচ্ছ ও মনে মনে করে। তারা কোন বিষয়ে কোন বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা সত্যে পরিণত করেন। সামনের পাতা (ছাঃ) আরো বলেন, আমি কি আমাকে জাহান্নামীদের সংবাদ দিব না? আর তারা হ’ল ভিন্নার্থক কথা নিয়ে ঝগড়াকারী মেজাজী ও অহংকারী’।[17]
ঔদ্ধত্যপরায়ণ, অহংকারী কঠিন পরিণতি সম্পর্কে হাদীছে দল হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, يحشر المتكبرون يوم القيامة أمثال الذر فى صور الرجال يغشاهم الذل من كل مكان فيساقون إلى سجن فى جهنم يسمى بولس تعلوهم نار الأنيار يسقون من عصارة أهل النار طينة الخبال 'ক্বিয়ামতের দিন অহংকারীদেরকে পিপীলিকার ন্যায় জড়ো করা হবে। অবশ্য আকৃতি-অবয়ব হবে মানুষের। অপমান কালে চতুর্দিক হ’তে বেষ্টন রাখবে। ‘বুলাস’ নামক জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে জোর করতে হবে। অগ্নিশিখা তাদের উপর ছেয়ে যাবে। আরলি করানো হবে জাহান্নামীদের শরীরনিঃসৃত ‘তানাতুল খাবাল’ নামক কদর্য পুঁজ-রক্ত’।[18]
বিনয়-নম্রতার ফযীলত ও উপকারিতা: আয়েশা (রাঃ) হ'তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, يا عائشة إن الله رفيق يحب الرفق ويعطى على الرفق ما لا يعطى على العنف وما لا يعطى على ما سواه। ‘হে আয়শা! আল্লাহ তা‘আলা নম্র ব্যবহারকারী। তিনি নমরতা পসন্দ করেন। তিনি নমরতার দরুন এমন কিছু দান করেন যা কঠোরতার দরুন দান না করেন; আর অন্য কিছুর দরুন তা না করেন।
রাসলুল্লাহ (ছাছা) উড়ে বেলা, اللهم من ولى من أمر أمتى شيئا فشق عليهم فاشقق عليه ومن ولى من أمر أمتى شيئا فرفق بهم فارفق به। ‘হে আল্লাহ! যে আমার উম্মাতের কোনরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে এবং তাদের প্রতি রূঢ় আচরণ করে তুমি তার প্রতি রূঢ় হও, আর যে আমার উম্মাতের উপর কোনরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে তাদের প্রতি নম্র আচরণ করে তুমি তার প্রতি নম্র ও সদয় হও’।[40]
রাসলুল্লাহ (ছাছা) বেলা, من ترك اللباس تواضعا لله وهو يقدر عليه دعاه الله يوم القيامة على من أى حلل حتى يخيره من أى حلل الإيمان شاء يلبسها। 'সামর্থ্য ব্যবস্থাপক যে ব্যক্তি ব্যক্তি প্রতি বিনয়বশত মূল্যবান পোশাক পরিধান করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সকলের কাছে আনবেন এবং আনবেন ডেকে আনবেন জ্ঞানের পোশাকের মধ্যে যে কোন পোশাক পরার অধিকারন'।[41]
বিনয় ও নম্র উপজেলা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাছা) বেলা, من أعطى حظه من الرفق أعطى حضى حظه خير الدنيا والآخرة ومن من احضه من الرفق حرم حضه من خير الدنيا والآخرة। ‘যাকে নমরতার কিছু অংশ প্রদান করা হয়েছে তাকে দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতার অংশ প্রদান করা হয়েছে। আর যাকে সেই নমরতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তাকে দুনিয়া ও আখেরাতের শক্তি কল্যাণ হ’তে বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِمَنْ يَحْرُمُ عَلَى النَّارِ أَوْ بِمَنْ تَحْرُمُنا عَلَيْهِ النَّارُ عَلَى كُلِّ قَرِيْبٍ هَيِّنَا أَلَى كُلِّ قَرِيْبٍ هَيِّنَا يَحْرُمُ بِمَنْ يَحْرُمُ عَلَى النَّارِ أَوْ بِمَنْ تَحْرُمُنا عَلَيْهِ النَّارُ عَلَى كُلِّ قَرِيْبٍ هَيِّنَ هَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَرِيْبٍ. জাহান্নাম হারাম ওয়ারেন নৈকট্য লাভকারী বিনয়ী ও নমর লোকের জন্য’।[43]
স্থানীয় নেতা (ছাঃ) তিনি আরো বলেন, إن الله إذا أحب أهل بيت أدخل عليهم الرفق 'নিশ্চয়ই আল্লাহ যখন কোন গৃহবাসীকে পাল, তখন তাদের নমরতা খুঁজে পাওয়া'। منعوه إلا ضرهم 'আল্লাহ কোন গৃহবাসীকে নমরতা দান করে তুলে উপকৃত করেন। আর নিকট থেকে তা উঠিয়ে নিলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।[45]
তিনি আরো বলেন, إن الله عز وجل ليعطي على الرفق ما لا يعطي على الخرق، وإذا أحب الله عبدا أعطاه الرفق، ما من أهل بيت يحرمون الرفق إلا حرموا الخير ‘নিশ্চয় আল্লাহ নমরতার মাধ্যমে যা দান করেন, কঠোরতার কারণে না। আল্লাহ কোন বান্দাকে ভালোবাসে তাকে নমরতা দান করেন। কোন গৃহবাসী নম্রতা পরিহারে, তারা কেবল কল্যাণে বঞ্চিত হয়।[46]
বিনয় ও নমরতার উজ্জ্বল দৃষ্ট : পৃথক উদ্ধান্ত, অহং মানুষ সব সময়ে অন্যদের চেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ মনে করে এবং তাকে নিজের সর্বদা সম্মান ও সম্মানকারী শ্রদ্ধা করুক তার প্রশংসা করে। আর একজন বিনয়ী ও নম্র মানুষ সর্বদা নিজেকে অন্যের চেয়ে ছোট মনে করে। সামনের নেতা (ছাঃ) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী দেখতে দেখতে তিনি নিজেকে ছোট মনে করতে পারেন। আব্দুল্লাহ আব্বাস (আব্বাস) হতে, ওমর ইবনুল খাম্বা (রাঃ)-কে মিম্বারে বলতে বলেছেন, তিনি বলেছেন, নবী করিম (ছাঃ)-কে বলতেছি, لاَ تُطرُونِى كَمَا أَطْرَتِ النصَرُونِى كَمَا أَطْرَتِ النصَرُونِى كَمَا أَطْرَتِ النصَرُونِى كَمَا أَطْرَتِ النصَبَهُ فَاْدَّلْ، أَطْرَتِ النصَرَبُ، أَطْرَتِ النصَبَىْ ابْدَهُ، أَطْرَتِ النصَرَبُ، أَطْرَتِ النصَبَاْدَّاْدُ، أَطْرَتِ النصَرََ، مَرْيَمَ اللهِ وَرَسُولُهُ. ‘তোমরা আমার প্রশংসায় সীমালংঘন না, যেভাবে খ্রীষ্টানরা ইবনু মারিয়ামের প্রশংসায় সীমালংঘন করেছে। সত্যঃ আমি হা’লাম ওয়ারে বান্দা। তাই তোমরা আমাকে সতর্ক বান্দা ও তাঁর বল’।[47]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেছেন, أنا سيد ولد آدم يوم القيامة ولا فخر وبيدى لواء الحمد ولا فخر وما من نبى يومئذ آدم فمن سواه إلا تحت لوائى وأنا أول من تنشق عنه الأرض ولا فخر 'ক্বিয়ামতের দিন আমি বনু আদমের নেতা হবো, এতে আমার কোন গর্ব নেই, আমার স্বীকৃতির ঝান্ডা থাকবে, আমার কোন গর্ব নেই। সে দিনম (আঃ) সকল সহ নবী-রাসূল আমার ঝালন্দ সমবেত হবেন এবং আমি সর্বপ্রথম যমীন থেকে উত্থিত হব, কোন গর্ব নেই’।[48]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
أن أعرابيا بال فى المسجد, فثار إليه الناس ليقعوا به فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم دعوه, وأهريقوا على بوله ذنوبا من ماء أو سجلا من ماء فإنما بعثتم ميسرين, ولم تبعثوا معسرين।
'একবার বার বেদুঈন মসজিদে প্রস্রাব করে। তখন তাকে প্রশাসন করার জন্য উত্তেজিত হওয়া পড়ল। পৌঁছতে পাটকেল (ছাঃ) বললেন, তাকে প্রস্রাব করতে পারেন এবং তার প্রস্রাবের উপর এক বালি পানি ঢেলে দেন। কারণ আমাদেরকে নম্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে, একজন ব্যক্তি হিসাবে নয়।[49]