সালাত-এর তাৎপর্য ও গুরুত্ব ||মিরাজ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামায

 

 সালাত-এর তাৎপর্য ও গুরুত্ব | মিরাজ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামায

সালাত-এর তাৎপর্য ও গুরুত্ব ‘সালাত' আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ দুআ, রহমত, ইসতিগফার ইত্যাদি । শরীআতের পরিভাষায় নির্দিষ্ট রুকন ও যিকর সমূহকে বিশেষ পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়ে আদায় করাকে। সালাত (নামায) বলা হয়। সালাতকে নামাযও বলা হয়।



| ইসলামে নামাযের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে এটি অন্যতম। ঈমান। ছাড়া অন্য চারটি রুকনের মধ্যে এটা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বজনীন। নামাযকে দীনের খুঁটি বলা হয়েছে। খুটি ছাড়া যেমন ঘর হয় না তদ্রপ নামায ছাড়াও দীন পরিপূর্ণ হয় না। নামাযের ফরযিয়্যাত অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। বালিগ পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই তা অবশ্য পালনীয়। শরী'আত সম্মত ওযার ছাড়া নামায তরক করা জায়িয নেই। নামাযের ফরযিয়্যাতকে। অস্বীকার করলে কাফির বলে গণ্য হবে। নামায আদায় করাই মুমিন ব্যক্তির ঈমানের নিদর্শন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন ।

بين العبد و بين الكفر ترك اللواة

বান্দা ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামায ত্যাগ করা। অর্থাৎ নামাযই প্রমাণ করে দেয়। যে, কে অনুগত বান্দা আর কে অস্বীকারকারী কাফির। সুতরাং একজন মু'মিন বান্দাকে তার ঈমানের প্রমাণ স্বরুপ অবশ্যই প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায আদায় করতে হবে। তাই ইসলামে ঈমানের পরই নামায কায়েমের জন্য গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে। কুরআন মজীদের। বহু জায়গায় নামায কায়েমের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে ?

واقيموا الصلوة وأتوا الزكوة واركعوا مع الركعين

তােমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও এবং যারা রুকূ' করে তাদের সাথে রুকু' কর।' (সূরা বাকারা, ২: ৪৩)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব হবে। যদি এ বিষয় ঠিক থাকে তবে সে মুক্তি পাবে এবং সফলকাম হবে। আর যদি তা ঠিক না। থাকে তবে সে ব্যর্থ ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

অপর এক হাদীসে আছে, একবার হযরত উমর (রা.) তাঁর প্রশাসকদের নিকট এ মর্মে পত্র প্রেরণ করলেন যে, আমার মতে তােমাদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে নামায । যে ব্যক্তি নামাযের হিফাযত করল এবং যথাসময় নামায আদায় করল সে তার দীনের হিফাযত করল। আর যে ব্যক্তি তা বরবাদ করল সে নামায ছাড়া অন্য আমলকেও চরমভাবে বরবাদ করে দিবে ।

মিরাজ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামায

, গ্রহ-তারা, গাছ-পালা, বৃক্ষ-লতা, জীব-জন্তু, পশু-পাখি, এক কথায় এ পৃথিবীতে রাহ তা'আলা যত মাখলুক সৃষ্টি করেছেন সব কিছুই নিজ নিজ পদ্ধতিতে মহান রাহুল

মানের দরবারে সিজদাবনত হয়ে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। তার ইবাদত ও আনুগত্যে সকলেই মশগুল। কোথাও কোন অবাধ্যতা ও হঠকারিতা নেই। কোথাও নেই বরক্তর সামান্যতম প্রকাশ । আদেশ পালন করে এবং সার্বক্ষণিক সিজদায় রত থেকেই সকলেই কৃতার্থ। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ?

والله يسجد ما في السموت وما في الأرض من دابة و الملئكة وهم لا يستكبرون

আল্লাহকেই সিজদা করে যা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে, পৃথিবীতে যত জীব-জন্তু আছে সে সমস্ত এবং ফিরিশতাগণও। তারা অহংকার করে না। (সূরা নাহল, ১৬ ও ৪৯।



এতে প্রমাণিত হয় যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যত কিছু আছে সব কিছুই আল্লাহর দরবারে সিজদাবনত হয়। তবে তাদের সিজদার ধরন ও পদ্ধতি আমাদের মত নয়। শুধু এতটুকুই নয় বরং তাদের তাসবীহ, তাহলীল এমনকি সালাত আদায়ের কথাও কুরআন মজীদে বিবৃত হয়েছে ?

ألم تر أن الله سبع له من في السموات والأرض و الطير ضقت ك قه اعلم صلاته وتشبيحة و الله عليم بما يفعلون

আপনি কি দেখেন না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা এবং উডডীয়মান বিহঙ্গকুল আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘােষণা করে। প্রত্যেকেই জানে তাদের সালাত এবং পবিত্রতা ও মহিমা পদ্ধতি। তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত। (সরা নর, ২৪ ও ৪১)

“প্রত্যেকেই জানে তাদের সালাত (নামায) আদায়ের পদ্ধতি"মহান আল্লাহর এ ঘােষণা থেকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, এ পৃথিবীতে যত মাখলুক রয়েছে সকলেই নিজ নিজ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করছে। অনুরূপ পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণও নামায আদায় করেছেন।

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা এ উম্মাতের বৈশিষ্ট্য। মিরাজ রজনীতে এ পাঁচ ওয়াক্ত নামায আল্লাহ তা'আলা উম্মতে মুহাম্মদীর উপর ফরয করেছেন।

 তিরমিযী শরীফে বর্ণিত এক হাদীসে আছে, হযরত আনাস ইবন মালিক (রা.) বলেন, মিরাজ রজনীতে নবী (সা.)-এর উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয হয়েছিল

। পরে তা কমিয়ে শেষ পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত করা হয়। এর পর বলা হয়, হে মুহাম্মদ! আমার কথায় কোন রদবদল হয় না। আপনার জনা এ পাঁচ ওয়াক্তের সাওয়াব

 পঞ্চাশ ওয়াক্তেরই সমান।৬ | পঞ্চাশ ওয়াক্ত থেকে কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সাব্যস্ত করার মনস্তাত্তিক ফায়দা হচ্ছে এই যে, এতে মানুষের মনে সদা এ কথা জাগ্রত 

থাকবে যে, পঞ্চাশ ওয়াক্তই হচ্ছে ফরয নামায়ের প্রস্তুত সংখ্যা। অর্থাৎ পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায আদায়ের জন্য প্রয়ােজনীয় সময়, শক্তি, যােগ্যতা ও সামর্থ।

 দিয়েই আল্লাহ তা'আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এ ধারণী যার অন্তরে জাগরুক থাকবে 



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url