জেনে নিন একজন নেককার স্ত্রীর অন্যতম ২০টি সেরা গুণ । The best qualities of a good wife
জেনে নিন একজন নেককার স্ত্রীর অন্যতম ২০টি সেরা গুণ । The best qualities of a good wife
![]() |
একজন নেককার স্ত্রীর অন্যতম ২০টি সেরা গুণ |
এই পৃথিবীতে একজন পুরুষ মানুষের জন্য সর্বোত্তম সম্পদ হচ্ছে নেককার স্ত্রী। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর থেকেবর্ণিত রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন →পুরো দুনিয়া ভোগের সামগ্রী আর সবচেয়ে উপভোগ্য সম্পদ হলো নেককার স্ত্রী বা পূর্ণবতী নারী। (মুসলিম হাদিস নাম্বারঃ ৩৫১২)
ইসলামের স্বামী এবং স্ত্রী উভয়কেই দিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদা। হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন →তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকটউত্তম আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি।( তিরমিজি হাদিস নাম্বার ৩৮৯৫)
একজন স্ত্রী স্বামীর কাছে কিভাবে উত্তম স্ত্রী হতে পারবেন তার জন্য আজকে আমরা দশটি ইসলামিক টিপস নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। আশা করি আপনারা সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়বেন।
১. দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার জন্য সবচেয়ে প্রথম করণীয় হলো আল্লাহর কাছে দোয়া করা
স্ত্রীর প্রথম দায়িত্ব হলো দোয়া করা। আসলে আমাদের জীবনে সব ভালো বিষয় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই প্রাপ্ত হয়। সুতরাং আল্লাহর অনুগ্রহের দিকে চলার লক্ষ্যে নানা কোণে চলবেনা। আল্লাহই পারেন আমাদের বৈবাহিক জীবনে সফলতা দান করতে।
এই নিয়ে পত্নীকে অবশ্যই আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করতে ধ্যান দেয়া উচিত। "হে আল্লাহ! আপনি আমাদের বিবাহিত জীবনে উত্তমভাবে জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুন এবং আমাদেরকে জান্নাত দান করুন।" কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "দোয়াই ইবাদত।" (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩৩৭০)। ইবাদত ব্যাপক অর্থের একটি শব্দ। দোয়া হল ইবাদত, আর ইবাদতে কোনো সন্দেহ নেই। দোয়া সম্পর্কে আরও রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "আল্লাহর নিকট বান্দার দোয়া অপেক্ষা অধিক মূল্যবান জিনিস নেই।" (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩২৯২)।
২. শ্রেষ্ঠ পত্নীর চেষ্টা করা উচিত
পত্নীকে সর্বদা আনন্দিত রাখার চেষ্টা করা উচিত। হাদিসে বলা হয়েছে, শ্রেষ্ঠ স্ত্রী হয়েছে সে যার প্রতি তার স্বামীর দৃষ্টি পড়লে স্বামীর মনে আনন্দের উদ্রেক করে। শ্রেষ্ঠ পত্নী তার পতির আদেশ মেনে চলে এবং তার জীবন ও সম্পদের অপছন্দনীয় বিরুদ্ধে কোনো অব গতি না দেয় সে মনে করা হয় শ্রেষ্ঠ স্ত্রী।
৩.স্বামীর কথা শোনা এবং তার আনুগত্য করা
আব্দুল্লাহ বিন আম্র বর্নী রাঃ বলেন, "রাসূল (সাঃ) আর বলেছেন, যদি কোন নারী এমন অবস্থায় মারা যায় তার স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট হয় তাহলে সে জান্নাতে গিয়ে থাকবে এবং স্ত্রীর জন্য নেক স্বামী তার জান্নাত অথবা জাহান্নামের হিসাবে যাবে।" সুতরাং, একজন আদর্শ পত্নী সর্বদা কামনা করে যে তার পতিকে সন্তুষ্ট রাখা।
৪. ঝগড়া এবং সব রকমের রাগারাগি থেকে বিরত থাকা:
অনেকের মধ্যে বৈবাহিক জীবনে ঝগড়ার কারণে সমস্যা হয়ে থাকে, তাই ভালো হয় কোনো কারণেই রাগো-রঙ্গ পরিস্থিতি তৈরি করা না। হয়তো স্ত্রীকে যথার্থতার অবগত করতে হবে, এবং সমস্যা সমাধানে আপাতত প্রতিক্রিয়া প্রদান করা উচিত। এমন পরিস্থিতিতে মিলনের পথ শান্তি ও সুরক্ষা পাওয়া যায়। তবে, স্ত্রীর জন্য ভালো হয় আবেগহীন অবস্থায় যাচাই করা হয়। যদিও মধ্যে মধ্যে স্বামীর নির্দেশে আপাতত মাঝে মিলন না পাওয়া যায়, তবুও মার্কিনি না করে মাধ্যমে মধ্যে মিলনের পথ খুঁজার প্রচেষ্টা করা উচিত। প্রতিবাদ করা না, এটা নিশ্চিত করা যায়, অবগত করা যায় নিজের আত্মার জন্য পরিস্থিতি ভালোবাসা করে থাকা।
৫. ভালো কাজের জন্য স্বামীকে ধন্যবাদ জানানো
একজন আদর্শ স্ত্রী যখন স্বামীকে তার ভালো কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাবে তখন স্বামী খুশি হবেন। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। আমাদের সমাজের যে সকল নারীরা এমন করেন না তাদের বৈবাহিক জীবন খুব একটা ভালো হয় না।
৬. স্বামীর সাথে আড্ডা দেওয়া
এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ পুরুষদের স্বাভাবিক স্বভাব হচ্ছে তারা হৃদয়গ্রাহী ও হাস্যোজ্জ্বল নারীদের পছন্দ করে। আমাদের নবী সাল্লাহু সাল্লাম একটি হাদিসে বলেছেন→ হে জাবের! তুমি এমন নারীকে বিবাহ করো যে তোমাকে আনন্দ দেবে এবং তুমিও তাকে আনন্দ দেবে।
৭. নিজে সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল থাকুন
অনেক আগে থেকেই নারীরা ঘরে গয়না পরতো ও সাজ-সজ্জা করে থাকতো। পবিত্র কুরআনে এসেছে →তোমার কাছে যেই ধরনের গয়না আছে তুমি তা পরো এবং সুন্দর সুন্দর পোশাক পরিধান করো তোমার স্বামীর জন্য।
৮.জান্নাতি নারীর বৈশিষ্ট্যগুলি পর্যালোচনা এবং তাদের অনুসরণ
কুরআন ও হাদিসে উল্লিখিত জান্নাতি নারীদের বৈশিষ্ট্যগুলি ধরণ করে বিচার করা উচিত।
৯. স্বামী কাজ থেকে ফিরলে তার যত্ন নিন
স্বামী অফিস থেকে ফিরে এসে বাড়িতে, সে যত্ন নেবেন। এটাই একটি পুরুষের দায়িত্ব। ভালোভাবে সাজিয়ে রাখুন এবং সন্তানদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে সহায়তা করুন।
১০. স্বামী হৃদয় জয় করার জন্য আপনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন
আল্লাহ মানুষকে অনেক সুন্দর গুনাবলী দান করেন। আপনি এই গুনাবলী ব্যবহার করে আপনার স্বামীর হৃদয় জয় করতে পারেন। এছাড়াও, প্রিয়তম, পুরুষগণের ধৈর্যে উত্তেজিত করার অধিকার উপলব্ধি করেছেন।
সমস্ত নারীদেরও উত্তম গুণাবলী অর্জনের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা আল্লাহর কাছে নেক ও প্রিয় হতে পারে। আল্লাহ পৃথিবীর সকল মুমিন নারীকে নেক সন্তান, নেক স্ত্রী এবং নেক মা হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন। আমরা আশা করি সমস্যার মধ্যেও ছোট ছোট সমস্যা ও তা সমাধানের জন্য প্রতিষ্ঠিত। যদি আপনার যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা সন্দেহ থাকে, অনুগ্রহ করে কমেন্ট করুন বা ফেসবুকে জানান।
১১. তাকওয়া ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা
একজন নেককার স্ত্রীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো তার ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা। তিনি নামাজ, রোজা, হালাল-হারামের পার্থক্য বোঝেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জীবনযাপন করেন। কুরআনে বলা হয়েছে:
"আর তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং সৎকর্মপরায়ণ, আমি অবশ্যই তাদের সৎকর্মের ফল প্রদান করবো।" (সূরা আন-নাহল: ৯৭)
১২. স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য
একজন আদর্শ স্ত্রী সর্বদা স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন এবং তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিশ্বাস ও ভালোবাসার ওপর নির্ভরশীল। মহানবী (সা.) বলেছেন:
"যে স্ত্রী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজানের রোজা রাখে, নিজের পবিত্রতা রক্ষা করে এবং স্বামীকে মান্য করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" (তিরমিজি)
১৩. বিনয়ী ও সুন্দর ব্যবহারের অধিকারী
একজন ভালো স্ত্রী সবসময় বিনয়ী এবং মার্জিত ব্যবহার করেন। তার আচরণে শিষ্টাচার ও ধৈর্য প্রকাশ পায়। তিনি কঠিন পরিস্থিতিতেও ধৈর্য হারান না এবং পরিবারের সবাইকে ভালোবাসেন।
১৪. স্বামীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা
একজন নেককার স্ত্রী কখনোই তার স্বামীর অসম্মান করে না। তিনি তার স্বামীর গোপন বিষয় অন্যদের কাছে প্রকাশ করেন না এবং তার পরিবারের সুনাম রক্ষা করেন।
১৫. সংসার পরিচালনায় দক্ষতা
একজন ভালো স্ত্রী সংসার পরিচালনায় দক্ষ হন। তিনি বাজেট, খরচ ও পরিবারের চাহিদাগুলো সুন্দরভাবে সামলান এবং সবার জন্য আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করেন।
১৬. ধৈর্যশীল ও সহনশীল হওয়া (H2)
সংসারে অনেক সমস্যা আসতে পারে, কিন্তু একজন নেককার স্ত্রী ধৈর্য ও সহনশীলতা দিয়ে সব কিছু সামাল দিতে পারেন। তিনি কখনো রাগের মাথায় ভুল সিদ্ধান্ত নেন না।
১৭. সদয় ও দয়ালু মনোভাব
একজন ভালো স্ত্রী পরিবারের সকলের প্রতি সদয় হন এবং বিশেষ করে স্বামী ও সন্তানদের প্রতি গভীর মমতা প্রকাশ করেন। তিনি মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করেন এবং পরিবারে শান্তি বজায় রাখেন।
১৮. স্বামীর মানসিক ও শারীরিক চাহিদার প্রতি যত্নবান
একজন আদর্শ স্ত্রী তার স্বামীর মানসিক ও শারীরিক চাহিদা বোঝেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন। তিনি স্বামীর কষ্ট বা চাপ বুঝতে পারেন এবং তাকে সর্বোচ্চ সহায়তা করেন।
১৯. স্বামীকে ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করা
একজন নেককার স্ত্রী সবসময় স্বামীকে ভালো কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত করেন। তিনি স্বামীর ধর্মীয় ও নৈতিক উন্নতির জন্য কাজ করেন এবং তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
২০. সন্তানদের উত্তম চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখা
একজন ভালো স্ত্রী কেবল স্বামীকে ভালোবাসেন না, বরং সন্তানদেরও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। তিনি সন্তানদের ইসলামী শিক্ষা দেন এবং তাদের চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
উপসংহার:
একজন নেককার স্ত্রী শুধুমাত্র একজন ভালো জীবনসঙ্গীই নন, বরং তিনি একটি পরিবার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি স্বামী, সন্তান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকেন। একজন নেককার স্ত্রীর গুণাবলি শুধু সংসারের সুখ-শান্তি বৃদ্ধিই করে না, বরং সমাজের উন্নতির জন্যও অপরিহার্য।
FAQ (Frequently Asked Questions)
১. একজন নেককার স্ত্রীর মূল গুণ কী?
একজন নেককার স্ত্রীর মূল গুণ হলো ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকা, এবং সংসার পরিচালনায় দক্ষ হওয়া।
২. একজন ভালো স্ত্রীর দায়িত্ব কী?
একজন ভালো স্ত্রীর দায়িত্ব হলো স্বামীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, সন্তানদের ভালো শিক্ষা দেওয়া এবং সংসারকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা।
৩. কুরআন ও হাদিসে একজন স্ত্রীর দায়িত্ব সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
কুরআন ও হাদিসে স্ত্রীর দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি স্বামী ও পরিবারের দেখভাল করবেন, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলবেন এবং সন্তানদের সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।
৪. কীভাবে একজন স্ত্রী স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারেন?
একজন স্ত্রী স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারেন তার কথাবার্তা ও আচরণের মাধ্যমে। তিনি স্বামীর সিদ্ধান্তকে সম্মান করবেন এবং তাকে সবসময় সমর্থন দেবেন।