নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন |নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে মহানবী (সা) -Islamic Life

নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন |নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে  মহানবী (সা)

নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন


ইতিহাসের দুটি পর্যায়ে নির্যাতিত হয়েছে নারীরা:

একবার অন্ধকারাচ্ছন্ন অজ্ঞতার যুগে, আর একবার আমাদের এ আধুনিক যুগে। অজ্ঞতার যুগে নারীদের সীমাহীন অত্যাচার করা হতাে।। ইসলাম তাদেরকে তা থেকে উদ্ধার করেছিল। এ আধুনিক যুগে আবার নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়। আধুনিক যুগে নারী স্বাধীনতা ও নারী মুক্তির ধুয়া তুলে নারীদেরকে তাদের স্বীয় সম্মান ও মর্যাদাকে ভূলণ্ঠিত করা হয়


সমাজদেহের অর্ধাংশ এ নারীরা যুগে যুগে হয়েছেন নির্যাতিত। নারীরা এ নির্যাতন সম্পর্কে এখনাে সচেতনছিলেন। কখনাে তারা নিজেরাই সমাজপতিদের কূটকৌশলে অবচেতনভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। অপরদিকে আধুনিকতার আড়ালে লালসার শিকারে পরিণত হচ্ছেন। নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরােধে মহানবী (সা)-এর ভূমিকা আলােচনা করার পূর্বে নারী সমাজ যুগে যুগে যেভাবে নির্যাতন ও সহিংসতার স্বীকার হয়েছে। তার বিবরণ তােলে আনা সমীচীন মনে করছি। 


        ইসলাম পূর্বকালে নারীকে বলা হতাে 'বিষাক্ত ৰােলতা', 'শয়তানের অঙ্গ', 'দংশনের নিমিত্তে সদা-প্রস্তুত বৃশ্চিক ইত্যাদি। নারীকে মনে করা হতাে 'পাপের উৎস'। বিভিন্ন ধর্মযাজক ও পুরোহিতগণের মতে, নারী যখন আদি পাপের উৎস, মানুষের জন্মগত পাপের কারণ, তখন সকল ভৎসনা অবজ্ঞা ও ঘৃণা তাদেরই প্রাপ্য। ‘স্টাটাস অৰ উমেন ইন মহাভারত’র ১৬ নং পৃষ্টায়'- হিন্দু সমাজে নারীদের অবস্থান। সম্পর্কে অধ্যাপক উন্দ্র উল্লেখ করেন- “নারীর ন্যায় এত পাপ-পঙ্কিলতাময় প্রাণী আর নেই। নারী প্রজ্বলিত অগ্নিস্বরূপ ও ক্ষুরের ধারালাে দিক।

          ইহুদি পরিবারে একজন নারী সম্পদ ও দাসীর মতাে। সৃষ্টিকর্তার চিরন্তন অভিশাপপ্রাপ্ত। তাদের থেকে পাপের সূত্রপাত এবং সকলের ধ্বংসের অনিবার্য কারণ'। (জেনেসিস, অধ্যায়-৩৫, শ্লোক-১৭)। ঐতিহাসিক ওয়েষ্টারমার্ক এর বর্ণনায় নারীর মধ্যে সকল মােহিনী শক্তি অঙ্গীভূত হয়ে আছে। যা সমগ্র বিশ্বের মনকে অন্ধ করে দেয়। চীনাদের ভাষায়, “নারী সর্বাপেক্ষা হতভাগ্য প্রাণী। জগতে নারী হতে নিকৃষ্ট আর কিছুই নাই'। পৌত্তলিকতা ও বর্বরতার যুগে নারীরা ছিল পণ্যসদৃশ ক্রয়-বিক্রয়ের সামগ্রী। নিজ স্ত্রীকে বিক্রি করা। ঋণ পরিশােধ মাধ্যম বানানাে। সামান্য অপরাধে গাছের সাথে। বেঁধে প্রহার ইত্যাদি ছিল এ যুগে নারী নির্যাতনের কুখ্যাত দিক। মিসরীয়, পারসিক, গ্রিক ও রােমান সভ্যতার সময় নারীদের ব্যক্তি স্বার্থে মানুষরূপে স্বীকার করা হলেও প্রকৃত যে অধিকার ও মর্যাদা তাদের পাওয়া উচিত। তা দেয়া হয়নি। তারা ছিল নিছক পুরুষের প্রয়ােজন মেটানাের সামগ্রী।।


নারী নির্যাতনের ধরন :

 প্রাচীন সভ্যতায় অধিকাংশ নারীদের কোন আইনগত ও সামাজিক অধিকার ছিলাে - তাই স্বামী মৃত্যুর পর জীবনধারণে নারীর বেঁচে থাকা অপ্রয়োজনীয় মনে করা হত। ইটালি ও স্পেনের খৃস্টান সংগঠনগুলাে মনে করে বিশ্বের নারীদের মধ্যে কেবলমাত্র আশীর্বাদপ্রাপ্ত কুমারী মেরিহ মানবিক মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। তারা। মানুষ ও প্রাণীর মাঝামাঝি পর্যায়ের সৃষ্টি (হকুকে মাদানী জাওজাইন, পৃ-১১)। হিন্দু আইনে বলা হয়েছে- রােগ, মহামারি, মৃত্যু, নরক, গরল ও অগ্নি নারী অপেক্ষা উত্তম। ভারতে কোন স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রীকে স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে মারা হতাে। নারীরা আদৌ মানব প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হয় ৫৮৬ খস্টাব্দে। এতে ফ্রান্সে কতিপয় বিশেষ কমিশন সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছিল- নারীরা মানুষ। তবে পুরুষের সেবার জন্যই তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।


আধুনিক সমাজে নির্যাতন ও সহিংসতা : ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি:

     ১৯৮৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নামকরা মডেল হতে গেলে নারীকে কমাতে হয় আশঙ্কাজনক পর্যায়ে তার ওজন । পরিণতিতে বন্ধ্যাত্ব, ভয়াবহ | রক্তচাপ, অ্যানােরেক্সিয়া ও বুলেমিয়ার মতাে মারাত্মক রােগে রােগাক্রান্ত হয়। প্রতিবছর ১০০০ জন মার্কিন নারী অ্যানােরেক্সিয়া রােগে মৃত্যুবরণ করে, (আমেরিকান অ্যানােরেক্সিয়া/ বুলেমিয়া অ্যাসােসিয়েশন)।।

আধুনিক সমাজে নির্যাতন ও সহিংসতা:ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি:

নারী-পুরুষের লাগামহীন মেলামেশা আর প্রবৃত্তি পূরণের অবাধ স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ ফলাফলস্বরূপ আধুনিক সমাজের নারীরা ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়। এমনকি এই বিকৃত আচরণ থেকে সমাজের নিষ্পাপ শিশুরা রেহাই পায় না। নারী স্বাধীনতার অগ্রপথিক যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে ধর্ষিত হয় একজন নারী আর বছরে এই সংখ্যা গিয়ে দাড়ায় সাড়ে সাত লক্ষে। (দি আগলি-টুথ, লেখক মাইকেল প্যারেন্টি)।

আধুনিক সমাজে নির্যাতন ও সহিংসতা:কর্মক্ষেত্রে:

গণমাধ্যমগুলােতে নারীকে প্রতিনিয়ত সেক্স সিম্বল হিসাবে উপস্থাপন করার ফলে নারীর প্রতি সমাজের সর্বস্তরে তৈরী হয় অসম্মানজনক এক বিকত দৃষ্টিভঙ্গী। মিডিয়া ও সরকারী তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৪০-৬০% নারী কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হয়।

 আধুনিক সমাজে নির্যাতন ও সহিংসতা:পারিবারিক সহিংসতা।

 যে সমাজে কোন জবাবদিহিতা নেই। পরস্পরের প্রতি কোন শ্রদ্ধাবােধ নেই। সেই সাথে রয়েছে সীমাহীন স্বেচ্ছাচারীতার সুযােগ। সে সমাজে ভয়াবহ পারিবারিক। সহিংসতা হওয়া নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। নারীকে গহবন্ধি ও তার ইচ্ছা বিরােধী। কোনাে কাজ করা কিংবা জোর করে কোনাে অমূলক বিষয় চাপিয়ে দেয়া হয়। তাছাড়া, যৌতুকের কারণে গৃহবধূর আত্যহত্যা, আগুনে পুড়িয়ে মারা, এসিড নিক্ষেপের মতাে ঘটনাও ঘটে। ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট'র তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর ৯ লক্ষ ৬০ হাজার পারিবারিক সহিংস আর প্রায় ৪০ লক্ষ নারী তার স্বামী অথবা বয়ফ্রেণ্ডের দ্বারা শারীরিক

মেন্টর ১৯৯৮ সালে প্রদ। ক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ব শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয় আধুনিক সমাজের যত নিয়ে গিয়ে তাকে হতে হয়|

 আধুনিক সমাজে নির্যাতন ও সহিংসতা:কুমারী মেয়েদের যন্ত্রণা:

নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার প্রধান অসহায় শিকার হয় আধনি কুমারী নারী। ফলে অপরিণত বয়সে পর্বতসম দায়িত্ব নিয়ে গিয়ে ভয়ঙ্কর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার।

আধুনিক সমাজে নির্যাতন ও সহিংসতা:বৈষম্যমূলক:

 পৃথিবীব্যাপী নারী-পুরুষের সমঅধিকারের বার্তা প্রচার করলেও নারী বৈষম্যের শিকার। প্রায় ৪০ বছর আগে প্রেসিডেন্ট কেনেডি যুক্তরাষ্ট্রে ই অ্যাক্ট আইন পাশ করলেও, কর্মরত নারীরা একই কাজের জন্য পুরুষদের চাই। প্রতি ডলারে ২৩ সেন্ট কম উপার্জন করে। ইউ.এস গভমেন্ট অ্যাকাউন্টেসিড

পথিবীব্যাপী নারী-পুরুষের সমঅধিকারের বার্তা প্রচার করলেও নারীরা প্রচণ্ড বৈষম্যের শিকার। প্রায় ৪০ বছর আগে প্রেসিডেন্ট। কেনেডি যুক্তরাষ্ট্রে ইকুয়েল পে অ্যাক্ট আইন। পাশ করলেও, কর্মরত নারীরা একই কাজের। জন্য পুরুষদের চাইতে প্রতি ডলারে ২৩ সেন্ট কম উপার্জন করে।

জরিপে দেখা যায়, শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলাের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মােট কমচারীর প্রায়। ৭০ ভাগ নারী হলেও নারী ব্যবস্থাপকরা পুরুষের চাইতে অনেক কম মথ পেয়ে

 আধুনিক সমাজে নির্যাতন ও সহিংসতা:পর্ণোগ্রাফি ইন্ডাষ্ট্রি:

পশ্চিমা বিশ্বে নারীরা সবচাইতে জঘন্যভাবে নির্যাতিত হয় পর্ণোগ্রাফি হত ঐ মাধ্যমে। যেখানে, ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির মতােই নগ্ন নারীদেহকে কেন্দ্র করে গড়ে হয়েছে পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত মুনাফালােভী এক চক্র।

নারী নির্যাতনের মূল কারণ:

মুক্ত সমাজ। মুক্ত মানুষ। মুক্ত অর্থনীতি। পুঁজিবাদী জীবনদর্শনের মূলমন্ত্র। মুক্ত সমাজের মুক্ত জীবনের ধারণা নারীকে মুক্তি দেয়নি বরং বহুগুণে। সহিংসতা, অত্যাচার আর নির্যাতনের পরিমাণ বেড়েছে। বাস্তবতা হলো, যা এই ধারণী অধুনা সমাজের মানুষকে ঠেলে দিয়েছে স্বেচ্ছাচারী ও দায়িত্ব

এক জীবনের দিকে। যেখানে স্বাধীনতার অপব্যবহারে স্বীকার নারী সমাজ। দিহিতার অনুপস্থিতি আর ব্যক্তি স্বাধীনতার চূড়ান্ত অপপ্রয়ােগে সামাজিক, নৈতিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক সহিংসতাসহ সকল প্রকার নারী নির্যাতনলীরে ধীরে সমাজে বেড়েই চলছে। স্বাধীনতার নামে নারীদেরকে হােটেল রেস্তোরার পরিচারিকা, স্টোরের সেলস  অফিস-আদালতের টাইপিস্ট, রিসিপশনিস্ট বানানাে হচ্ছে। 


এভাবে অধুনা | নারীদেরকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর সজিবাদীরা বানিয়ে তােলে খেলার পুতুল। ৯ বিষয়ে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ'র সুন্দর একটি বক্তব্য নােট করা যায়। নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনি পূর্বক স্ত্রী হিসাবে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি বলেছেন- নারী পুরুষের ভােগের জিনিস নয়। তারা আদরের পুতুলও নয় । জীবন যাচ্ছে নারী পুরুষের সহযােগিনী। নারী যদি পুরুষের দাসী হয় তাহলে পুরুষ স্ত্রীদের দাস।


বর্তমান সমাজে প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতিত হওয়ার কারণগুলাের মধ্যে অন্যতম। হচ্ছে যৌতুক। যদিও আমরা ঘটা করে প্রচার করছি যৌতুক একটা সামাজিক ব্যাধি। যৌতুক নেওয়া-দেওয়া দুটোই অপরাধ। তথাপি অভিভাবকেরা মেয়ের সুখের জন্য যৌতুক দিতে বাধ্য হচ্ছে। যৌতুকের টাকা হাতে না পেলে কিছু পশু স্বভাবের পুরুষ স্ত্রীকে বেদমভাবে প্রহার করছে। নিত্য মানসিক টর্চারে বিবেষিত। করে তুলছে তাদের সুন্দর জীবন। কখনও হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে স্ত্রীর মুখে। এস৬ মারতেও দ্বিধা করছে না। আর স্ত্রীও সহ্যহীন হয়ে বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ।



সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরােধে মহানবী (সা) সত্যিকার অর্থেই মহানবী (সা) নারী সমাজকে সকল প্রকার সহিংসতা ও ...। থেকে মুক্ত করেন। সুষ্ঠ সুন্দর বিবাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে তাদের। উচ্চ আসনে সম্মানিত করেন। যা প্রকৃত অথে তৎকালিন সময়ে নারী । করেনি। নবী করীম (সা) নারী নির্যাতন ও সহিংসতা রােধে সূরা নিসা ১৯ নং আয়াতে এ বলেন, “স্ত্রীদের সঙ্গে দয়া ও ন্যায়বিচারের সাথে জীবন যাপন করবে'।

নীসে বর্ণিত হচ্ছে- 'যে মুসলমান তার স্ত্রীর সাথে যত ভদ্র ও সদাশয় । ততই পূর্ণতা লাভ করে' (বুখারী)। তিনি আরাে উদাত্ত কণ্ঠে ঘােষণা করেন । হচ্ছে পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী”। আরেকধাপ এগিয়ে বলেন, “বিশ্বে অমূল্য সম্প, মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে ধর্মপরায়ণা স্ত্রী। একই সাথে দাবি করেন, “তােমাদের মধ্যে তারাই উত্তম, যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে। শুধু তাই নয়। নবী করীম (সা) নারী সমাজকে সম্মানিত করতে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আরাে ঘােষণা। করেন, 'তােমাদের মধ্যে উত্তম মানুষ তারা যারা নিজ স্ত্রীর দৃষ্টিতে উত্তম বলে গণ্য (তিরমিযী)। 


ইসলাম নারী সমাজকে কতটা সম্মানিত ও মর্যাদার সুউচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছে তা সুরা নিসার ১৯ নং আয়াত থেকে আরাে স্পষ্ট হয়ে উঠে। ইরশাদ হচ্ছে, হে। ঈমানদারগণ তােমাদের জন্য হালাল নয় যে তােমরা জোড়পূর্বক নারীদের মালিক। হয়ে বসবে'। এখানে জোড়পূর্বক শব্দের অর্থ হচ্ছে নারীদের সম্মতিহীন তাদেরকে বিবাহ করা যাবে না। ইচ্ছে করলেই পিতা-মাতাও একাজটি করতে পারবেন না। 

কেননা বিবাহ বন্ধনের ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ মতামত অত্যাবশ্যক। এটাই আয়াতের ব্যাক্ষায় পাওয়া যায়। অন্যত্র আরাে এরশাদ  হচ্ছে, “হে নবী! আপনি মুমিনদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিতে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের পবিত্রতা রয়েছে” (নূর, ৩০)।। মুসনাদে আহমদে হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা) বিবাহ করার আদেশ দিয়েছেন এবং বিবাহহীন থাকতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। (মাজহারী)। তবে এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ফিকাহবিদদের একটি মত এরূপ উল্লেখ রয়েছে, যাদ। কোন ব্যক্তি বিবাহ করলে গােনাহে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, উদারণত-ল। দাম্পত্য জীবনের হক তথা মােহরানা আদায় করার শক্তি রাখে না, স্ত্রীর উপর জুলুশ। করবে কিংবা অন্য কোন গুনাহে নিশ্চিত হয়ে যাবে, এরূপ আশঙ্কাগুলাে প্রবল ২৬। তার জন্য বিবাহ হারাম করা হয়েছে। কেননা মােহরানা অর্থনৈতিকভাবে না। জীবনকে নিশ্চয়তা দান করে। যদিও তালাক পৃথিবীতে নিকৃষ্টতম কাজ তথাপি যদি কেউ তার স্ত্রীকে তালাক দেয় 

        

  নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভরণ-পােষণের দায়িত্ব স্বামীর উপরই থাকে এবং তার মােহরানা তথা কাবীন দিয়ে দিতে হয়। যদি কেউ এই মােহরানা আদায় ছাড়াই বরণ করে তাহলে প্রায় সূক্ষ থেকে ক্ষমা লাভ ছাড়া আলাহ তাআলাও ক্ষমা বেন না। যেহেতু এই মােহরানা স্ত্রীর হক। ইরশাদ হচ্ছে 'তােমরা তােমাদের জীদের বিনিময় (মােহরানা) দিয়ে দাও' (সূরা নিসা- ৫)। weরিবারিক সহিংসতা ও নিযাতন প্রতিরােধে কুরআনে ঘোষণা হচ্ছে- 'স্বীগণ তােমাদের অঙ্গাবরণ (তথা পােশাক স্বরূপ) এবং তােমরা তাদের পােশাকস্বরূপ। (বাকারা, ১৮৭)। হাদীসে বর্ণিত- স্ত্রী হচ্ছে পুরুষের অর্ধাঙ্গীনি এবং তার গৃহের সভাজী। রাসূল (সা) আরাে বলেন, 'যে ব্যক্তি তিনটি, দুটি বা একটি কন্যা সন্তান যথাযথভাবে লালন পালন করবে সে জান্নাতি। স্বয়ং মহানবী (সা)-ও ছিলেন চারজন কন্যা সন্তানের পিতা। 




হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত- একদা এক ব্যক্তি রাসূল (সা)-এর দরবারে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল আমার সাহচার্যে কোন ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম ব্যবহার পাবার অধিকারী? তদোত্তরে তিনি বললেন, তােমার মা। এভাবে তিনবার বলার পর বললেন তােমার বাবা (সহীহাইন) আরাে বর্ণিত হচ্ছে- 'সন্তানের জন্য মায়ের পায়ের নিচেই রয়েছে জান্নাত' (বুখারী)। অন্যত্র বলেন, উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক (মুসলিম)। সমাজের অনেক নারী রয়েছে যারা বিধবা হিসেবে পরিচিত। তাদের প্রতি সহিংসতা রক্ষায় রাসূল (সা) ইরশাদ করেন, 'যারা বিধবাদের দায়িত্ব গ্রহণ করবে, তারা যেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী এবং নিরলস নামাযী ও সদা রােজা পালনকারী' (বুখারী ও মুসলিম)। সামাজিক নির্যাতন ও সহিংসতা প্রতিরােধে, নারীকে সামাজিক মর্যাদা দানেমহাগ্রন্থ আল-কুরআনে সূরা নিসা (নারী) নামে নারীর অধিকার ও কর্তব্য সংক্রন্ত বৃহৎ একটি সূরা নাযিল করা হয়েছে। যা পুরুষের বেলায় এভাবে হয়নি। 




উপরােক্ত কারণে অমুসলিম বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক জর্জ বার্ভিাসও স্বীকার করেছেন একমাত্র । হযরত মুহাম্মদ (সা)-ই নারী জাতিকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করেছেন। সম্পদের পূর্ণ মালিকানা প্রদানেও নারীদের প্রতি ইসলামের ভূমিকা অনন্য। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হচ্ছে, “পুরুষগন তার অর্জিত সম্পদের মালিক হবে, নারীগণও তাদের অর্জিত সম্পদের মালিক হবে" (সরা নিসা)। এছাড়াও সূরা বনী ইসরাইল, সূরা বাকারা, সূরা নুর, সূরা আহযাব বিশেষত সরা নিসা নারী সমাজের জন্য পুষ্পের সাজ হিসেবেই অবতীর্ণ হয়েছে। যা অন্য কোন ধর্মে পাওয়া বিরল। ইসলামের বিধান হচ্ছে, ছেলে মেয়েকে পূর্ন মােহরানা ও ভরণ-পােষণের অধিকারের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধন সম্পাদন করবে। মেয়েদের মােহরানা আদায়ে ছেলেদের মনে। কোন প্রকার সংশয় থাকা বিবাহ হারামের পর্যায়। মুসনাদে আহমদে উল্লেখ রয়েছে, ‘ঐ ব্যক্তির জন্য বিবাহ উচিত নয়, যে বিবির মােহরানা আদায় মনে সংশয় পােষণ।

 

স্ত্রীর উপর হাত তুলে কিংবা স্ত্রীকে মারধর করে সে কখনাে ভাল মানুষ হতে পারে না। তবে একটি শৈথিল্য দেখিয়ে কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, 'সীর পক্ষ থেকে যদি নাফরমানী সংঘঠিত হয় কিংবা এমন কোন আশংকা দেখা যায়, তাহলে ১ম পর্যায় তাদেরকে নরমভাবে বুঝবে, যদি তাতেও বিরত না হয়, তাহলে (২য় পর্যায়). তাদের শয্যা ত্যাগ কর (তাদের বিছানা নিজের থেকে পৃথক করে দেবে) যদি এই। ভদ জনােচিত শাস্তির পরেও স্বীয় অবাধ্যতা ও দুস্কর্ম থেকে ফিরে না আসে, তাহলে (৩য় পর্যায়) প্রহার করবে” (সূরা নিসা, ৩৪ ও ৩৫)। তবে এক্ষেত্রে নবী করীম (সা) ইরশাদ করেন, তাদেরকে এমনভাবে প্রহার করা যাবে না, যাতে তাদের রক্ষপাত হয় বা কোন অঙ্গের ক্ষতি হয় কিংবা তাদের শরীরে কোন প্রকার চিহ্ন থাকে। কেননা, অন্য এক হাদীসে রাসূল (সা) কঠোর ভাষায় বলেছেন- 'যে স্ত্রীদের উপর হাত তুলে সে সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি' (মুসনাদে আহমদ)। 



নারীদের প্রতি ইসলামের এই সম্মান তাদেরকে যে মর্যাদা দিয়েছে, বর্তমান সমাজে তা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে চলেছে। কারণ, ইসলাম যেখানে নারী সমাজকে মােহরানা দিতে বলেছে, সেখানে উল্টো নারী সমাজ পুরুষদেরকে যৌতুক দিতে হচ্ছে। যা সর্ব সমাজে একটি ঘৃণিত বিষয়। আমাদের ভদ্র শাসিত সমাজেও এই বিষয়টি মােটেই গ্রহণীয় নয়। তথাপি যৌতুক প্রথা আমাদের সমাজে চালু থাকায় নারী সমাজ সহিংসতা ও নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। অন্যদিকে, তাদের অর্থনৈতিক অধিকারও খর্ব করা হচ্ছে। নারী সমাজ পিতা, স্বামী, পুত্র সন্তানের সম্পদের উত্তরাধিকারী হয় এবং স্বামীর থেকে মােহরানা প্রাপ্ত হয়। এসব সম্পত্তি দ্বারা সে ব্যবসা করতে পারে এবং এর লভ্যাংশের পূর্ণ মালিক নারী নিজেই। এতে স্বামী, সমাজ এমনকি সরকারেরও কোনাে মালিকানা বা হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। কেননা কুরআনুল কারীমে


স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, 'নারীগণও তাদের অর্জিত সম্পদের মালিক হবে’ (সূরা । নিসা)। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলােচিত বিষয় নারী ক্ষমতায়ন। অথচ প্রতিনিয়ত সর্বত্রই। নারীরা হচ্ছে নির্যাতিত এবং সহিংসের বলি। সভ্য সমাজে এমন অপরাধ চলতে। দেয়া যায়না। নারীদেরকে তাদের প্রাপ্য অধিকারটুকু দিয়ে সামাজিকভাবে আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার ব্যাবস্থা পুরুষকেই নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি নারী পুরুষ সকলে মিলে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরােধের আন্দোলনকে বেগবান করে বুঝিয়ে দিতে হবে- এ দেশে নারী নির্যাতনকারীর কোন স্থান নেই। নজরুলের সেই কবিতার চরণটিই শেষলগ্নে বলতে চাই

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর। অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url